এক ঠিকানায় সকল সরকারি সেবা নিয়ে আসছে ‘নাগরিক সেবা’

অনলাইন ডেস্ক
প্রকাশ: ৩০ এপ্রিল ২০২৫, ১৭:৩৬

সরকার নাগরিকদের জন্য একক প্ল্যাটফর্মে সরকারি সেবা পৌঁছে দিতে শুরু করতে যাচ্ছে নতুন ও যুগান্তকারী উদ্যোগ — ‘নাগরিক সেবা বাংলাদেশ’, যা সংক্ষেপে পরিচিত হবে ‘নাগরিক সেবা’ নামে।
৩০ এপ্রিল প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারী ফয়েজ আহমদ তৈয়্যব গণমাধ্যমকে জানান, আগামী ১ মে থেকে এই উদ্যোগের আওতায় স্বতন্ত্র উদ্যোক্তারা সেবাদাতা হিসেবে নিবন্ধনের জন্য আবেদন করতে পারবেন। আবেদন করতে হবে www.nagoriksheba.gov.bd ওয়েবসাইটে।
তিনি জানান, ইউনিয়ন ডিজিটাল সেন্টারগুলোকে এই কাঠামোর অন্তর্ভুক্ত করা হবে এবং শুরুতেই প্রায় ১০০টি গুরুত্বপূর্ণ সেবা এক প্ল্যাটফর্মে দেওয়া হবে। প্রত্যেক মন্ত্রণালয়কে ইতিমধ্যে অন্তত দুটি সেবা তালিকাভুক্ত করে নাগরিক সেবা কেন্দ্রে যুক্ত করার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।
সব অঞ্চলে পৌঁছাবে এই সেবা কেন্দ্র
নতুন এই উদ্যোগে গ্রাম থেকে শহর পর্যন্ত— প্রতিটি ওয়ার্ডে নিবন্ধিত উদ্যোক্তার মাধ্যমে সরকারি সেবা পৌঁছানো হবে। ‘নাগরিক সেবা’ হবে এমন এক প্ল্যাটফর্ম, যা ন্যাশনাল ইন্টার-অপারেবিলিটি ফ্রেমওয়ার্ক ও শক্তিশালী ডেটা গভর্নেন্স কাঠামোর ভিত্তিতে পরিচালিত হবে। এর মাধ্যমে জনগণ সরাসরি কোনো সরকারি অফিসে না গিয়ে প্রয়োজনীয় সেবা নিজ এলাকায় বসেই নিতে পারবেন।
উদ্যোক্তাদের জন্য নির্ধারিত থাকবে ইউনিফর্ম, ব্র্যান্ডিং, আইডি কার্ড এবং সরকার অনুমোদিত প্রশিক্ষণ ও সনদ। সেবা কেন্দ্রের জন্য থাকবে নির্ধারিত ইন্টারনেট প্যাকেজ ও সহায়ক প্রযুক্তি অবকাঠামো। উদ্যোক্তারা পাবেন সহজ শর্তে আর্থিক সহায়তা, কম্পিউটার ও প্রয়োজনীয় সরঞ্জাম সংগ্রহে সহায়তা এবং সরকারি ভবনে কো-ওয়ার্কিং স্পেসের সুবিধা।
সিঙ্গেল পোর্টাল ও সুপার অ্যাপে যুক্ত হবে সকল সেবা
এই প্ল্যাটফর্মে থাকবে একটি সুপার অ্যাপ ও ওয়েব পোর্টাল, যেখানে সমস্ত সেবা পাওয়া যাবে এক ছাদের নিচে। বিলিং, পেমেন্ট এবং আবেদন ট্র্যাকিং হবে সম্পূর্ণ ডিজিটাল, স্বয়ংক্রিয় এবং স্বচ্ছ। নাগরিককে কোনো আবেদনপত্র হাতে নিয়ে সরকারি অফিসে যেতে হবে না— অনলাইনে করা আবেদন সরাসরি যাবে সংশ্লিষ্ট দপ্তরে।
যে সেবাগুলো পাওয়া যাবে শুরুতে
● নাগরিক পরিচয় পত্র, জন্ম ও মৃত্যু নিবন্ধন বিষয়ক আবেদন
● জাতীয় পরিচয়পত্র সংশোধন ও পুনর্মুদ্রণ
● ভূমি সংক্রান্ত তথ্য ও আবেদন, সিঙ্গেল ল্যান্ড সার্ভিস গেইটওয়ে
● নতুন পাসপোর্টের আবেদন ও পাসপোর্ট নবায়ন
● অনলাইন জিডি
● আয়কর রিটার্ন আবেদন
● ভ্যাট চালান জমাদান আবেদন
● ট্রেড লাইসেন্স ও ট্রেড মার্ক আবেদন
● বিভিন্ন সামাজিক সুরক্ষা ভাতা ও অনুদানের আবেদন
● বিদ্যুৎ,পানি,গ্যাসসহ সকল ইউটিলিটি বিল প্রদান
● ড্রাইভিং লাইসেন্স, যানবাহন রেজিস্ট্রেশন নবায়ন
● শিক্ষা,স্বাস্থ্য ও কৃষি সেবা
● অন্যান্য গুরুত্বপূর্ণ ডিজিটাল সেবা।
উদ্যোক্তাদের জন্য নতুন দিগন্ত
প্রধান উপদেষ্টার কার্যালয় ও আইসিটি বিভাগের অধীনে উদ্যোক্তারা প্রয়োজনীয় প্রশিক্ষণ ও সনদ পেয়ে নিজেদের এলাকায় এই সেবা কেন্দ্র পরিচালনা করতে পারবেন। ভবিষ্যতে দোকান ছাড়াও যেকোনো ব্যক্তি নিজ ঘরে বসেই ডিজিটাল সেবা দিতে পারবেন ‘সিটিজেন সার্ভিস পার্সন’ বা ‘সিটিজেন সার্ভিস লেডি’ হিসেবে।
সবার জন্য সেবা, সবার জন্য সুযোগ
বাংলাদেশে এখনো অনেক মানুষ অনলাইন সেবা গ্রহণে সক্ষম নন। ‘নাগরিক সেবা’ সেই ব্যবধান ঘুচিয়ে সরকারি সেবাকে সাধারণ মানুষের হাতের নাগালে নিয়ে আসবে, বলছেন ফয়েজ আহমদ তৈয়্যব। একই সঙ্গে এ উদ্যোগ স্থানীয় পর্যায়ে কর্মসংস্থান ও উদ্যোক্তাদের জন্য সামাজিক ব্যবসার নতুন সুযোগও সৃষ্টি করবে।