Logo
×

Follow Us

প্রবাস খবর

ফ্রান্সে অনিয়মিত অভিবাসীদের জন্য বৈধতার নতুন দ্বার

Icon

অনলাইন ডেস্ক

প্রকাশ: ২৩ মে ২০২৫, ১৭:১২

ফ্রান্সে অনিয়মিত অভিবাসীদের জন্য বৈধতার নতুন দ্বার

ফ্রান্সে কর্মরত অনিয়মিত অভিবাসীদের জন্য আশাব্যঞ্জক এক নতুন সুযোগ সৃষ্টি হয়েছে। শ্রমবাজারে শ্রমিক সংকট মোকাবিলায় দেশটির সরকার ‘চাহিদাসম্পন্ন পেশার হালনাগাদ তালিকা’ (Métiers en tension) প্রকাশ করেছে, যা ২০২৪ সালের অভিবাসন আইনের আলোকে কার্যকর হয়েছে। বৃহস্পতিবার (২২ মে) দেশটির শ্রম, স্বাস্থ্য, সংহতি ও পরিবার মন্ত্রণালয় সরকারিভাবে গেজেটে এই তালিকাটি প্রকাশ করে।

নিয়মিত হওয়ার পথ সুগম হচ্ছে

এই নতুন নীতিমালার আওতায়, যারা নির্দিষ্ট কিছু শ্রমঘাটতির পেশায় কাজ করছেন এবং নির্দিষ্ট শর্ত পূরণ করেন, তারা সরকারি প্রশাসনিক দপ্তর (প্রেফেকচুর) বরাবর আবেদন করে বৈধতা লাভের সুযোগ পাবেন। এর ফলে বহু অনিয়মিত অভিবাসী, বিশেষ করে বাংলাদেশ, ভারত, পাকিস্তান ও শ্রীলঙ্কার নাগরিকদের জন্য একটি বাস্তবসম্মত ও স্বস্তিদায়ক পথ খুলে যাচ্ছে।

দক্ষিণ এশিয়ানদের জন্য বিশেষ সম্ভাবনা

নতুন তালিকায় হোটেল ও রেস্তোরাঁ, নির্মাণ, কৃষি, গৃহকর্ম, পরিবহনসহ বেশ কয়েকটি খাতকে অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে। দক্ষিণ এশিয়া থেকে আগত অনেক অভিবাসী এসব খাতে দীর্ঘদিন ধরে অনিয়মিতভাবে কাজ করে আসছেন। বিশেষ করে হোটেল-রেস্তোরাঁ খাতের অন্তর্ভুক্তি এই অঞ্চল থেকে আগতদের জন্য আশার আলো হয়ে এসেছে।

প্যারিসে সর্বাধিক পেশা অন্তর্ভুক্ত

ফ্রান্সের ১৩টি প্রশাসনিক অঞ্চলের মধ্যে ইল-দ্য-ফ্রঁস, অর্থাৎ প্যারিস অঞ্চলেই সর্বোচ্চ ৪১টি পেশা তালিকাভুক্ত হয়েছে। এর মধ্যে রয়েছে—শেফ, নির্মাণকর্মী, নার্স, বৈদ্যুতিক ও যান্ত্রিক কারিগর, গাড়ি মেরামতকারী, ওয়েল্ডার এবং কৃষিশ্রমিকসহ নানা পেশা।

তবে পেশা নির্বাচনের ক্ষেত্রে অসন্তোষও দেখা দিয়েছে। হোটেল ও রেস্তোরাঁ শিল্প সংগঠনগুলো জানিয়েছে, শেফ অন্তর্ভুক্ত হলেও রান্নার সহকারী বা ওয়েটারদের মতো গুরুত্বপূর্ণ পেশাগুলো উপেক্ষিত হওয়ায় হতাশা তৈরি হয়েছে।

বৈধতা পাওয়ার শর্তাবলি কী?

নতুন নীতির আওতায় বৈধতা পাওয়ার জন্য অভিবাসীদের অবশ্যই—

অন্তত তিন বছর ধরে ফ্রান্সে বসবাস করতে হবে,

গত দুই বছরে অন্তত ১২ মাস তালিকাভুক্ত পেশায় কাজ করার প্রমাণ দেখাতে হবে,

কোনো অপরাধে জড়িত না থাকা এবং পুলিশের স্বচ্ছতা সনদ (ক্লিয়ারেন্স) থাকতে হবে,

সমাজের সঙ্গে সংহতি ও ফরাসি মূল্যবোধের প্রতি সম্মান দেখাতে হবে।

সবচেয়ে তাৎপর্যপূর্ণ পরিবর্তন হলো—এখন আবেদনকারীদের আর নিয়োগকর্তার সুপারিশপত্র লাগবে না। অভিবাসীরা নিজেরাই সরাসরি আবেদন করতে পারবেন। এই নিয়ম প্রাথমিকভাবে ২০২৬ সাল পর্যন্ত কার্যকর থাকবে এবং এতে সিজনাল ও স্টুডেন্ট জবও অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে।

মিশ্র প্রতিক্রিয়া রাজনৈতিক অঙ্গনে

নতুন তালিকাটি প্রকাশের পর ফ্রান্সের রাজনৈতিক ও শ্রমিক ইউনিয়ন মহলে মিশ্র প্রতিক্রিয়া দেখা গেছে। বামঘেঁষা সিজিটি ট্রেড ইউনিয়নের এক নেতার মতে, এই তালিকা মন্ত্রীদের মধ্যে মতপার্থক্যের প্রতিফলন এবং শ্রমবাজারের প্রকৃত চাহিদা সম্পূর্ণভাবে প্রতিফলিত করে না।

অন্যদিকে, অভিবাসনবিরোধী অবস্থানের জন্য পরিচিত স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী ব্রুনো রোতাইয়ো অভিমত দেন, “প্রথমে দেশে বৈধভাবে বসবাসকারী বেকার বিদেশিদের চাকরির অগ্রাধিকার দেওয়া উচিত।”

তবে শ্রমমন্ত্রী আস্ত্রিদ পানোসিঅঁ-বুভে বলেন, “এই সিদ্ধান্ত শ্রমবাজারের বাস্তবতা, মানবিক দৃষ্টিভঙ্গি এবং অর্থনৈতিক স্বার্থ বিবেচনায় নেওয়া হয়েছে। এর মাধ্যমে অভিবাসন ব্যবস্থাপনায় আরও শৃঙ্খলা ও লক্ষ্যভিত্তিক কাঠামো আসবে।”

হোটেল-রেস্তোরাঁ খাতে বিশাল সুযোগ

সরকারি তথ্য অনুযায়ী, ২০২৫ সালের মধ্যে কেবল হোটেল-রেস্তোরাঁ খাতেই প্রায় ৩ লাখ ৩৬ হাজার নতুন পদ সৃষ্টি হবে বলে ধারণা করা হচ্ছে। যার অর্ধেকেরও বেশি পূরণে নিয়োগকারীরা সংকটে পড়তে পারেন। এই বাস্তবতায় অনিয়মিত অভিবাসীদের নিয়মিত করার এই উদ্যোগ যথেষ্ট তাৎপর্যপূর্ণ।

Logo