Logo
×

Follow Us

প্রবাস খবর

ফ্রি ভিসার ফাঁদে পড়ে সৌদিতে নিঃস্ব হচ্ছে শত শত বাংলাদেশি

Icon

নিজস্ব প্রতিবেদক

প্রকাশ: ২১ মে ২০২৫, ১২:৫০

“ফ্রি ভিসা, ভালো চাকরি, উন্নত ভবিষ্যৎ”—এই লোভনীয় আশ্বাসে ৫ লক্ষ টাকা ধার করে দালালের হাতে তুলে দিয়েছিলেন মানিকগঞ্জের দৌলতপুর উপজেলার যুবক মো. রানা আহমেদ। সৌদি আরবে গিয়েই পরিবারের দারিদ্র্য ঘোচানোর স্বপ্ন দেখেছিলেন তিনি। কিন্তু বাস্তবে জুটেছে নির্মম প্রতারণা, বন্দিদশা এবং মরুভূমির উত্তাপে দিনমজুরির কঠিন বাস্তবতা। রানা জানান, সৌদিতে পৌঁছানোর পরই তাকে নিয়ে যাওয়া হয় দাম্মামের একটি নির্জন ভবনে। সেখানে একটি ছোট রুমে রাখা হয় ৪০ জনকে। প্রতিদিন অর্ধাহারে, মানবেতর পরিবেশে মাসের পর মাস চলতে থাকে তার দিন। একদিন সুযোগ বুঝে পালিয়ে যান। “এক রুমে ৪০ জন থাকতাম। একটা টয়লেটে সিরিয়াল ধইরা যাইতাম। খাবার-পানি ঠিকমতো দিতো না। কাজের কথা বললে গায়ে হাত তুলতো, এক ভাইয়ের সাহায্যে পালিয়ে এসেছি। এখন মরুভূমিতে খাটুনি খাটতেছি, দিনে যা পাই তাই দিয়ে চলি,” বলেন রানা। ১৫ দিনের মধ্যেই ভালো কোম্পানিতে মোটা বেতনের চাকরির আশ্বাসে টাঙ্গাইলের নাগরপুর উপজেলার দালাল বাদলের কথায় রানাকে সৌদি পাঠায় পরিবার। কিন্তু বাস্তবে কাজ তো দেয়ইনি, বরং তিন মাস আটকে রাখে রানাকে। রানার মা বলেন, “ছেলেটা কষ্টে আছে! বাদলের কাছে টাকা চাইতে গেলে বলে, ‘তোমার ছেলে এখন অবৈধ, টাকা চাইলে পুলিশে দিয়া ধরায়া দিবো।’ এ কোন বিচার?” – প্রশ্ন রানার মায়ের। বাধ্য হয়ে রানার পরিবার বাদলের বিরুদ্ধে নাগরপুর থানায় লিখিত অভিযোগ দিলেও এখনও পর্যন্ত কোনো দৃশ্যমান ব্যবস্থা নেয়নি পুলিশ বা প্রশাসন। বরং, বাদলের পক্ষ থেকে আসছে হুমকি। প্রবাসী কথা’র অনুসন্ধানে উঠে এসেছে—বাদলের খপ্পরে পড়ে প্রতারিত হয়েছেন আরও অনেক গ্রামীণ যুবক। তাদের অনেককে বিমানবন্দর থেকেই বিক্রি করে দেওয়া হয়েছে অন্য সাপ্লায়ারের হাতে, যেন তারা মানুষ নয়, পণ্য। এ বিষয়ে ভুক্তভোগী আরেকজন যুবক রিফাত বলেন, “ওরা আমাদের মানুষ না, পণ্য মনে করে। কেউ কোনো দায়িত্ব নেয় না। কোম্পানি বলে কফিলের নাম নেই, কফিল বলে কোম্পানির নাম চেনে না।” ভুক্তভোগীদের পরিবারের দাবি, দালাল বাদলের বিরুদ্ধে দ্রুত আইনি ব্যবস্থা নিতে হবে। প্রতারিতদের টাকা ফিরিয়ে দেওয়ার পাশাপাশি ভবিষ্যতে যেন আর কেউ এমন প্রতারণার শিকার না হয়, সে জন্য কার্যকর পদক্ষেপ নেওয়ার আহ্বান জানান তারা। জনশক্তি রফতানির সঙ্গে জড়িত বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এখনই কার্যকর ব্যবস্থা না নিলে হাজারো রানা হারিয়ে যাবে মরুর বালুচরে। দালালচক্র দমন, বিদেশি কোম্পানির সঙ্গে সরাসরি চুক্তি, ন্যায্য মজুরি ও নিরাপদ কর্মসংস্থান নিশ্চিতে সরকারকে এখনই এগিয়ে আসতে হবে।

Logo