Logo
×

Follow Us

প্রবাস খবর

কে এই কফিল? যার হাতে জিম্মি প্রবাসী শ্রমিকরা!

Icon

অনলাইন ডেস্ক

প্রকাশ: ২৬ মে ২০২৫, ২৩:৩২

কে এই কফিল? যার হাতে জিম্মি প্রবাসী শ্রমিকরা!

সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে গত কয়েকদিনে ভাইরাল ‘স্যাণ্ডা’ ইস্যু। চায়ের দোকান থেকে শুরু করে অফিসপাড়া—সবখানেই এখন এ নিয়ে আলোচনা। কৌতুক, ট্রল, মিম—সব মিলিয়ে স্যাণ্ডা যেন এখন ‘টক অব দ্য কান্ট্রি’। তবে এ আলোচনা শুধু হাস্যরসেই সীমাবদ্ধ নয়। একই সাথে সামনে আসছে ‘কফিল’ ইস্যু—যা অনেক বেশি গম্ভীর, বাস্তব ও মর্মান্তিক।

‘কফিল’ শব্দটি হয়তো অনেকের কাছেই নতুন। কিন্তু মধ্যপ্রাচ্যে কাজ করা লাখো বাংলাদেশির জীবনের সঙ্গে এটি ওতপ্রোতভাবে জড়িত। কফিল মূলত একজন নিয়োগকর্তা, যিনি একজন অভিবাসী শ্রমিকের চাকরি, ভিসা, আবাসন অনুমতি—সবকিছু নিয়ন্ত্রণ করেন। তাঁর সম্মতি ছাড়া একজন শ্রমিকের পক্ষে নতুন কাজ খোঁজা, চাকরি পরিবর্তন কিংবা এমনকি দেশে ফেরত আসা পর্যন্ত অসম্ভব হয়ে পড়ে।

একজন দায়িত্বশীল কফিল হলে প্রবাসী শ্রমিক কিছুটা স্বস্তিতে থাকেন। কিন্তু বিপরীতে, খারাপ আচরণকারী কফিল কিংবা কফিলের ছত্রছায়ায় থাকা দালালচক্র শ্রমিকদের চরম শোষণের শিকার হতে হয়। দালালরা ভুয়া প্রতিশ্রুতি দিয়ে শ্রমিকদের প্রলোভিত করেন, বিভিন্ন ফাঁদে ফেলে অর্থ হাতিয়ে নেন।

মধ্যপ্রাচ্যের দেশগুলো—সৌদি আরব, কুয়েত, কাতার, বাহরাইন, ওমান ও সংযুক্ত আরব আমিরাত—অনেক বাংলাদেশি পরিবারের জীবিকার প্রধান উৎস। দেশে থাকা স্বজনরা প্রবাসী প্রেরিত অর্থেই জীবন চালান। কিন্তু এই রেমিট্যান্সের পেছনে রয়েছে অবর্ণনীয় কষ্টের কাহিনি।

৪৫ থেকে ৫০ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রায়, প্রতিদিন ১২–১৪ ঘণ্টা কাজ করতে হয় হাজারো শ্রমিককে। বিশ্রামের সুযোগ সীমিত, সাথে অপমান ও প্রতারণা যেন নিত্যদিনের ঘটনা। প্রতিবাদ করলেই চাকরি হারানোর ভয় কিংবা জোর করে দেশে পাঠিয়ে দেওয়ার হুমকি আসে। এমনকি কেউ মারা গেলেও তার মরদেহ ফেরত আনতে কফিলের অনুমতির প্রয়োজন হয়।

এই ‘কফিল ব্যবস্থা’ এতটাই প্রভাবশালী ও কঠোর যে অনেকেই একে আধুনিক দাসপ্রথার সঙ্গে তুলনা করেন। শ্রমিকেরা মুখ খুলতে ভয় পান, অন্য চাকরির সুযোগ খোঁজাও হয়ে পড়ে দুঃসাধ্য।

হাস্যরসের মাঝে গা ভাসানোর পাশাপাশি আমাদের উচিত এই বাস্তবতা উপলব্ধি করা—যেখানে একজন প্রবাসীর জীবন ঝুলে থাকে অন্য কারও ‘অনুমতি’র দড়িতে।

প্রবাসী শ্রমিকদের জীবনযাত্রা নিরাপদ, সম্মানজনক ও মানবিক করতে কফিল ব্যবস্থার সংস্কার জরুরি। কৌতুকের মাঝে হাসতে হয় ঠিকই, তবে বাস্তবতার কান্না ভুলে গেলে চলবে না।

Logo