Logo
×

Follow Us

প্রবাস খবর

ইউরোপের পথে ‘টারজান ভিসা’: স্বপ্নের পেছনে ঝুঁকিপূর্ণ যাত্রা

Icon

অনলাইন ডেস্ক

প্রকাশ: ২২ এপ্রিল ২০২৫, ২৩:২৩

ইউরোপের পথে ‘টারজান ভিসা’: স্বপ্নের পেছনে ঝুঁকিপূর্ণ যাত্রা

বাংলাদেশ থেকে ইউরোপে পাড়ি জমানোর এক নতুন কৌশলকে ঘিরে তৈরি হয়েছে একটি ভয়ংকর প্রবণতা—‘টারজান ভিসা’। কাগজপত্রে এর কোনো অস্তিত্ব না থাকলেও বাস্তবে এটি একটি অপ্রাতিষ্ঠানিক এবং বিপজ্জনক ভ্রমণ পন্থা হিসেবে পরিচিত হয়ে উঠেছে। উন্নত জীবনের আশায় যুবকরা মানব পাচারকারীদের হাতে পড়ে এই ভিসার ফাঁদে পা দিচ্ছেন, যার পরিণতি অনেক সময়ই হয় বিভীষিকাময়।

টারজান ভিসার মূল বৈশিষ্ট্যই হলো যাত্রাপথের অনিশ্চয়তা ও ভয়াবহতা। নামটি এসেছে ‘টারজান’ চরিত্র থেকে, যিনি এক গাছ থেকে আরেক গাছে লাফিয়ে বেড়াতেন। ঠিক তেমনই, এই ভিসায় যাত্রীরা এক দেশ থেকে আরেক দেশে পাড়ি দেন, অনেক সময় জাল ভিসা ব্যবহার করে, কখনো বিমানপথে, আবার কখনো নৌকা, ট্রাক, বাস কিংবা পায়ে হেঁটে। ঝুঁকিপূর্ণ এসব যাত্রায় তারা পাড়ি দেন বন-জঙ্গল, পাহাড়, মরুভূমি এমনকি সমুদ্রও।

২০১৭ সালের এপ্রিলে এমনই এক দুঃসাহসিক যাত্রায় ইটালির সীমান্তে পৌঁছেছিলেন নেত্রকোনার রনি সাহা। নবম শ্রেণি পর্যন্ত পড়াশোনা করা রনি ইউরোপে পাড়ি জমাতে দালালদের দিয়েছেন প্রায় ১২ লাখ টাকা। কিন্তু ভাগ্য সহায় না হওয়ায় তাকে আটক হয়ে আশ্রয়কেন্দ্রে থাকতে হয় এবং পরবর্তীতে ২০১৮ সালের মে মাসে আন্তর্জাতিক অভিবাসন সংস্থার সহায়তায় তাকে দেশে ফিরে আসতে হয়।

এ ধরনের ভিসার আরও কিছু নামে পরিচিতি পেয়েছে, যেমন ‘ডলফিন ভিসা’—যেখানে নৌকা বা জাহাজের খোলে লুকিয়ে যাত্রা করা হয়, কিংবা ‘ফ্রি ভিসা’—যা মূলত সৌদি আরব বা মধ্যপ্রাচ্যের দেশগুলোতে কাজের প্রতিশ্রুতি দিয়ে নিয়ে যাওয়া হলেও বাস্তবে কোনো চাকরির নিশ্চয়তা থাকে না।

অনুমান করা হয়, প্রায় এক কোটি প্রবাসী বাংলাদেশির মধ্যে অন্তত ১০ লাখ ব্যক্তি আছেন যারা এসব অপ্রাতিষ্ঠানিক এবং জাল ভিসার মাধ্যমে বিদেশে পাড়ি জমিয়েছেন। এরা নিজেরা ‘আনডকুমেন্টেড’ হওয়ায় বৈধ পথে রেমিট্যান্স পাঠাতে পারেন না। হুন্ডির মাধ্যমে তারা অর্থ দেশে পাঠান, যা সরকারিভাবে রেমিট্যান্স হিসেবে গণনা হয় না। এতে বৈধ অর্থনীতির বাইরে বড় অঙ্কের লেনদেন চলতে থাকে।

বর্তমানে সাগরপথে ইউরোপে প্রবেশের চেষ্টাকারীদের তালিকায় বাংলাদেশিদের অবস্থান চতুর্থ। ২০১৫ থেকে ২০১৭ সাল পর্যন্ত যুদ্ধবিধ্বস্ত দেশগুলোর লোকজনের ছদ্মবেশে অনেক বাংলাদেশি ইউরোপে প্রবেশের চেষ্টা করেন, যা আন্তর্জাতিক মহলে বাংলাদেশের ভাবমূর্তিকে প্রশ্নবিদ্ধ করে। এ কারণে ২০১৭ সালে জার্মানিসহ ইউরোপীয় দেশগুলো বাংলাদেশকে আনডকুমেন্টেড নাগরিকদের ফেরত নিতে চাপ দেয় এবং সেই চাপেই চুক্তিবদ্ধ হয় বাংলাদেশ সরকার।

বিশেষজ্ঞরা মনে করেন, এই মানব পাচার কার্যক্রমের পেছনে রয়েছে সংঘবদ্ধ চক্র, যেখানে দেশি-বিদেশি দালালদের পাশাপাশি কিছু ইমিগ্রেশন কর্মকর্তার যোগসাজশও রয়েছে। অন্যথায় জাল ভিসা নিয়ে কেউ কিভাবে বিমানযাত্রা করতে পারে?

তারা বলছেন, প্রতারিত ব্যক্তিরা যদি আইনের আশ্রয় নেন এবং আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী সক্রিয়ভাবে অভিযানে নামে, তাহলে এই ধরনের পাচার প্রতিরোধ করা সম্ভব।

 

Logo