Logo
×

Follow Us

প্রবাস খবর

যেসব কারণে কানাডায় ওয়ার্ক পারমিট হারাচ্ছেন অভিবাসীরা

Icon

অনলাইন ডেস্ক

প্রকাশ: ২৩ এপ্রিল ২০২৫, ১৭:২৪

যেসব কারণে কানাডায় ওয়ার্ক পারমিট হারাচ্ছেন অভিবাসীরা

কানাডায় বসবাসরত বহু অভিবাসী বর্তমানে এক দুঃসহ বাস্তবতার মুখোমুখি হচ্ছেন। দীর্ঘসূত্রতা, নীতিমালার পরিবর্তন এবং প্রশাসনিক জটিলতায় কাজের অনুমতি (ওয়ার্ক পারমিট) নবায়নের প্রক্রিয়া ব্যাহত হওয়ায় তারা আইনি মর্যাদা হারাচ্ছেন—ফলে কাজ করতে পারছেন না, পাচ্ছেন না স্বাস্থ্যসেবা ও শিক্ষার মতো মৌলিক অধিকার।

মানবিক সংকটে এক অভিবাসী পরিবার

ব্রিটিশ কলম্বিয়ার প্রিন্স রুপার্ট শহরে বসবাসকারী দেবী আচার্য এবং তার পরিবার এই সংকটের একটি করুণ উদাহরণ। ২০২২ সালে স্বামী ও পঞ্চবার্ষিক পুত্র নবদেবকে নিয়ে কানাডায় আসেন দেবী। স্থানীয় একটি হোটেলে হাউজকিপিংয়ের কাজ করতেন তিনি, নতুন জীবনের স্বপ্নে এগোচ্ছিলেন। কিন্তু কাজের অনুমতি শেষ হয়ে যাওয়ার পর থেকে তার জীবনে নেমে আসে অন্ধকার।

কাজ বন্ধ হওয়ায় দেবী স্বাস্থ্যবিমার সুযোগ হারান, আর সেই অভাবে চলতি বছরের মার্চে একটি গর্ভপাতের শিকার হন। “যদি সময়মতো চিকিৎসা পেতাম, হয়তো সন্তানকে বাঁচানো যেতো,” বলেন দেবী, কান্নাজড়ানো কণ্ঠে।

২০২৪ সালের সেপ্টেম্বরে তারা নতুন ‘লেবার মার্কেট ইমপ্যাক্ট অ্যাসেসমেন্ট’ (এলএমআইএ) এর জন্য আবেদন করলেও এখনো কোনো উত্তর মেলেনি। আবেদন প্রক্রিয়াধীন থাকলেও তাদের কাজের অনুমতি মেয়াদোত্তীর্ণ হয়ে গেছে, ফলে পরিবারটি আইনি ভাবে কানাডায় থাকলেও কর্মহীন অবস্থায় দিন পার করছেন। এমনকি ছোট নবদেবও স্কুলে যেতে পারছে না।

প্রক্রিয়ার দীর্ঘসূত্রতা ও অনিশ্চয়তা

বর্তমানে এলএমআইএ অনুমোদনের গড় সময় ১৬৫ কার্যদিবসে দাঁড়িয়েছে, যেখানে ২০২৩ সালে তা ছিল মাত্র ৫৮ দিন। ‘সার্ভিস কানাডা’ বলছে, ২০২৫ সালের এপ্রিলেও তারা এখনো ২০২৪ সালের এপ্রিলের আবেদন প্রক্রিয়াকরণে ব্যস্ত।

অভিবাসন বিশেষজ্ঞ কানওয়ার সিরাহ জানান, “এই প্রথমবার আমরা এমন দীর্ঘ বিলম্ব দেখছি। অনেকে মর্যাদা হারিয়ে বেআইনি উপায়ে কাজ করছেন বা প্রতারিত হচ্ছেন—অনেকে ভিত্তিহীন আশ্রয় আবেদন করতেও বাধ্য হচ্ছেন।”

সরকারি প্রতিক্রিয়া ও ভবিষ্যত দিকনির্দেশনা

যদিও লিবারেল সরকার অভিবাসীদের জন্য বৈধতার সুযোগ দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়েছিল, এখন তারা বলছে এই সুবিধা কেবল নির্দিষ্ট খাতে কাজ করা অভিবাসীদের ক্ষেত্রে প্রযোজ্য হবে। একই সঙ্গে প্রধানমন্ত্রী মার্ক কার্নি আসন্ন নির্বাচনের প্রাক্কালে অভিবাসন সীমিত করার প্রতিশ্রুতিও দিয়েছেন।

সরকারি তথ্য অনুসারে, যারা ৬০ দিনের মধ্যে এলএমআইএ পেয়ে যান, তারা কাজ চালিয়ে যেতে পারেন। কিন্তু যারা বিলম্বের কারণে কাজের অনুমতি হারান, তাদের জন্য কোনো সুস্পষ্ট নীতিমালা এখনো নেই।

ভবিষ্যৎ কী?

বিশ্লেষকদের মতে, ওয়ার্ক পারমিট সংকটের পেছনে রয়েছে নীতির অসঙ্গতি, আবেদনকারীর চাপ এবং পরিষেবা ব্যবস্থার দুর্বলতা। এই অব্যবস্থাপনার শিকার হয়ে হাজারো পরিবার আজ অনিশ্চিত ভবিষ্যতের দিকে তাকিয়ে আছে।

দেবী আচার্যের কথাতেই ফুটে উঠেছে অভিবাসীদের হতাশা: “দু’বছর আগে কানাডাকে ঘর ভেবেছিলাম। এখন সেই স্বপ্নটাই ভেঙে যাচ্ছে।”

Logo