Logo
×

Follow Us

প্রবাস খবর

মাথার খুলি দিয়ে বানানো পাত্রে ওয়াইন খেতেন অক্সফোর্ড শিক্ষকরা

Icon

অনলাইন ডেস্ক

প্রকাশ: ২৩ এপ্রিল ২০২৫, ১৮:১১

মাথার খুলি দিয়ে বানানো পাত্রে ওয়াইন খেতেন অক্সফোর্ড শিক্ষকরা

ব্রিটেনের ঔপনিবেশিক শাসন কেবল দাসপ্রথার ভয়াবহতায় সীমাবদ্ধ ছিল না, বরং সেই শাসনের নিষ্ঠুরতা মৃত্যুর পরও থেমে থাকেনি। সম্প্রতি এমনই এক ভয়াবহ ও লজ্জাজনক তথ্য উঠে এসেছে—অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের ওরচেস্টার কলেজে দীর্ঘদিন ধরে একটি পাত্র ব্যবহৃত হতো, যেটি তৈরি হয়েছিল একজন মানুষের মাথার খুলির ওপর ভিত্তি করে।

দ্য গার্ডিয়ান’ পত্রিকার একটি অনুসন্ধানী প্রতিবেদনে জানা যায়, ঔপনিবেশিক আমলে লুটপাট করা মানবদেহাবশেষের একটি উদাহরণ এই পাত্রটি। বহুকাল ধরে শিক্ষকরা এতে ওয়াইন পান করতেন, এমনকি পরে পাত্রটি থেকে চকলেট পরিবেশন করা হতো।

এই পাত্র নিয়ে গুরুত্বপূর্ণ তথ্য উঠে এসেছে প্রত্নতত্ত্ববিদ ও অধ্যাপক ড্যান হিকসের আসন্ন বই "Every Monument Will Fall" এ। তিনি জানাচ্ছেন, ২০১৯ সাল পর্যন্ত এই খুলির পাত্রটি কখনো প্রদর্শনীতে, কখনো কলেজের টেবিলে ব্যবহৃত হতো। তবে সময়ের সাথে অনেকেই এতে অস্বস্তি অনুভব করতে শুরু করলে, এর ব্যবহার সম্পূর্ণভাবে নিষিদ্ধ করা হয়।

খুলিটি ২২৫ বছর আগের এবং সম্ভবত এটি একজন ক্যারিবীয় দাস নারীর ছিল বলে ধারণা করা হচ্ছে। যদিও খুলিটির প্রকৃত পরিচয় জানা যায়নি, তবু পাত্রটির মালিকের নাম রূপার খোদাইয়ে লেখা ছিল—জর্জ পিট রিভারস। তিনি একজন ইউজেনিসিস্ট ছিলেন, যার দৃষ্টিভঙ্গি বর্ণবাদ ও নাৎসি মতাদর্শের সঙ্গে গভীরভাবে সম্পর্কযুক্ত।

পিট রিভারস এই পাত্রটি পেয়েছিলেন তার দাদা হেনরি লেন ফক্স পিট রিভারসের কাছ থেকে, যিনি একজন সংগ্রাহক এবং পিট রিভারস মিউজিয়ামের প্রতিষ্ঠাতা। ধারণা করা হয়, ১৮৮৪ সালে এক নিলাম থেকে পাত্রটি কেনা হয়েছিল। তখন এটি একটি কাঠের হাতলসহ ছিল, যাতে রানী ভিক্টোরিয়ার নাম খোদাই করা ছিল এবং তৈরি হয়েছিল তার অভিষেকের বছরেই—১৮৩৮ সালে।

এই ঘটনা নতুন করে আলোচনায় এনেছে ঔপনিবেশিক ইতিহাসের সেই অধ্যায়গুলো, যা দীর্ঘদিন ধরে উপেক্ষিত ছিল। হিকসের মতে, ইতিহাসে সাধারণত শুধু সেই ব্যক্তিদের নাম উচ্চারিত হয়, যারা ঔপনিবেশিক শাসন থেকে সুবিধা পেয়েছে—যেমন সিসিল রোডস বা এডওয়ার্ড কলস্টন। কিন্তু যাঁরা নিপীড়নের শিকার হয়েছিলেন, তাঁদের পরিচয় প্রায়ই মুছে দেওয়া হয়। হিকস মনে করেন, এই ধরনের সাংস্কৃতিক দখল ও মর্যাদাহীনতা শারীরিক সহিংসতারই এক রূপ।

এ ঘটনায় লেবার পার্টির এমপি বেল রিবেরিও অ্যাডি বলেন, "অক্সফোর্ডের শিক্ষিত শ্রেণির সদস্যরা যখন একজন দাস নারীর খুলিকে পাত্রে পরিণত করে সেখান থেকে পানীয় পান করেন—তখন সেটি একটি সভ্য সমাজের মুখে চরম চপেটাঘাত।"

ওরচেস্টার কলেজ জানিয়েছে, ২০১১ সাল থেকে পাত্রটির ব্যবহার সীমিত করা হয় এবং ২০১৯ সালে সেটির ব্যবহার পুরোপুরি নিষিদ্ধ করা হয়। বর্তমানে গবেষকদের পরামর্শ মেনে সেটিকে সম্মানের সঙ্গে সংরক্ষণে রাখা হয়েছে। ড্যান হিকসের বইয়ে এই খুলির বাইরেও ঔপনিবেশিক আমলে লুট হওয়া আরও কিছু মানবদেহাবশেষের ইতিহাস তুলে ধরা হয়েছে। এর মধ্যে রয়েছে এক জুলু কমান্ডারের খুলি, যা লুট করেছিলেন ফিল্ড মার্শাল লর্ড গ্রেনফিল্ড।

Logo