সৌদি আরবে বাংলাদেশি প্রবাসীদের অবৈধ হওয়ার কারণ কী?

অনলাইন ডেস্ক
প্রকাশ: ২৬ এপ্রিল ২০২৫, ১৬:৩৯

বাংলাদেশের অর্থনীতিতে রেমিট্যান্স প্রেরণ করে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখছেন বিশ্বের নানা প্রান্তে থাকা প্রবাসীরা। মধ্যপ্রাচ্যের দেশ সৌদি আরবে অবস্থানরত বাংলাদেশিদের সংখ্যা সবচেয়ে বেশি। কিন্তু দেশটির শ্রমবাজারে দিন দিন বাড়ছে বাংলাদেশি প্রবাসীদের অবৈধ হয়ে পড়ার প্রবণতা। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এর পেছনে মূলত কাজের চুক্তি ভঙ্গ, আকামা (বাসস্থান পারমিট) সংকট এবং দালাল চক্রের প্রতারণা দায়ী।
সম্প্রতি কাতারে প্রবাসীদের এক অনুষ্ঠানে অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস বলেন, "প্রবাসীদের অবদানের কারণেই বাংলাদেশের ভঙ্গুর অর্থনীতি ঘুরে দাঁড়াতে সক্ষম হয়েছে। দেশের বর্তমান শক্ত ভিত্তির পেছনে প্রবাসীদের বিরাট অবদান রয়েছে।"
তবে অর্থনীতিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখলেও প্রবাসী বাংলাদেশিদের সমস্যার গভীরতা বেড়েছে। সৌদি আরবগামী অনেক শ্রমিক দালালদের মাধ্যমে প্রতারণার শিকার হচ্ছেন। চুক্তি অনুযায়ী দীর্ঘমেয়াদি আকামা ও নির্ধারিত চাকরির প্রতিশ্রুতি দেওয়া হলেও বাস্তবে অনেককে কয়েক মাসের আকামা দিয়ে ফেলে রাখা হয়। ফলে নির্দিষ্ট সময় পরে বৈধ কাগজপত্রের অভাবে তাঁরা অবৈধ হয়ে পড়েন।
দিনাজপুরের ইয়াসিন আলী এক দালালের মাধ্যমে সৌদি আরবে পাড়ি জমিয়েছিলেন। তাকে আকর্ষণীয় বেতনের চাকরি ও এক বছরের আকামার প্রতিশ্রুতি দেওয়া হয়েছিল। কিন্তু বাস্তবে তিনি পেয়েছেন মাত্র তিন মাসের আকামা। মেয়াদ শেষে নবায়নের জন্য আবার কয়েক লাখ টাকা ব্যয় করতে বাধ্য হন।
বিশেষজ্ঞরা জানান, রিক্রুটিং এজেন্সি ও দালালরা সৌদি আরবে কাজের নিশ্চয়তা ছাড়াই শ্রমিক পাঠাচ্ছে। এতে কাজের সন্ধানে শ্রমিকরা বিভিন্ন সমস্যায় পড়ছেন। নির্ধারিত চাকরি না থাকায় এবং আকামা নবায়নে অতিরিক্ত খরচ বহন করতে না পারায় অনেকে অবৈধ হয়ে যান।
সৌদি আরবের জাজান বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক ও অভিবাসন গবেষক ড. হোসাইন আহমেদ লিটন বলেন, "প্রতিদিনই সৌদি আরবে বাংলাদেশের দূতাবাসে আকামা সংকট নিরসনে প্রবাসীদের ভিড় দেখা যায়। কিন্তু পর্যাপ্ত সহায়তা না পাওয়ার অভিযোগ রয়েছে। অধিকাংশ প্রবাসী আকামা নবায়নের ব্যয় মেটাতে না পেরে অবৈধ হয়ে পড়ছেন।"
সৌদি স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের কঠোর নির্দেশনায় নিয়মিতভাবে আবাসন ও শ্রম আইন ভঙ্গের অভিযোগে অভিযান চালানো হচ্ছে। এসব অভিযানে বিপুলসংখ্যক বাংলাদেশি আটক হচ্ছেন। আকামার বৈধতা না থাকা, শ্রম আইন লঙ্ঘন ও অবৈধভাবে কাজ করার অপরাধে সাজা ভোগের পর তাঁদের দেশে ফেরত পাঠানো হয়।
জনশক্তি কর্মসংস্থান ও প্রশিক্ষণ ব্যুরোর তথ্য অনুযায়ী, চলতি বছর (২০২৫ সালে) সৌদি আরবে গেছেন ১ লাখ ২০ হাজার ৮৭৬ জন বাংলাদেশি শ্রমিক। অথচ একই সময়ে দেশে ফিরেছেন কয়েক হাজার অবৈধ প্রবাসী। ওয়েজ আর্নার্স কল্যাণ বোর্ড জানায়, ২০২৪ সালে আউটপাসের মাধ্যমে দেশে ফেরত এসেছেন ৫০ হাজার ২৩১ জন, এবং ২০২৩ সালে এসেছিলেন ৫৮ হাজার ৮৯৭ জন। ফেরত আসা অধিকাংশ প্রবাসী বৈধ আকামা না থাকায় জেল খেটে দেশে ফেরেন।
অভিবাসন বিশেষজ্ঞরা মনে করেন, সৌদি শ্রমবাজারে বাংলাদেশের ভাবমূর্তি সংকটে পড়েছে। শ্রমিকদের বৈধতা নিশ্চিত করতে এবং প্রতারণা রোধে সরকারি তদারকি জোরদার করা জরুরি। একই সঙ্গে প্রবাসীদের সহায়তায় দূতাবাসের কার্যকরী ভূমিকা বাড়ানোর ওপর গুরুত্বারোপ করেছেন তাঁরা।