গ্রিনকার্ডধারী অভিবাসীদের প্রতি ট্রাম্প প্রশাসনের কড়া সতর্কবার্তা

আন্তর্জাতিক ডেস্ক
প্রকাশ: ০১ মে ২০২৫, ১৮:১৪

যুক্তরাষ্ট্রে অভিবাসন নীতির কড়াকড়ি আগেও ছিল, তবে ডোনাল্ড ট্রাম্প ২০১৭ সালের জানুয়ারিতে প্রেসিডেন্ট হিসেবে দায়িত্ব নেওয়ার পর থেকেই অভিবাসন ব্যবস্থায় এক নতুন মাত্রা যোগ হয়। তাঁর প্রশাসন শুরু থেকেই অবৈধ অভিবাসীদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা গ্রহণের নীতি গ্রহণ করে। কিন্তু সময়ের সাথে সাথে দেখা যাচ্ছে, কেবল অবৈধ নয়— বৈধ অভিবাসীরাও এখন প্রশাসনের কড়া নজরদারির আওতায় পড়ছেন।
বৈধতা থাকলেও নিরাপদ নয়
যুক্তরাষ্ট্রে স্থায়ীভাবে বসবাসের অনুমতি পাওয়া ব্যক্তিরা, অর্থাৎ গ্রিনকার্ডধারীরা এতদিন ধরে নিজেদের তুলনামূলক নিরাপদ মনে করতেন। কিন্তু USCIS (U.S. Citizenship and Immigration Services) কর্তৃক সম্প্রতি প্রকাশিত একটি সতর্কবার্তায় সেই ধারণার বড়সড় ধাক্কা লাগছে।
বার্তায় বলা হয়েছে, গ্রিনকার্ড থাকলেও তা স্থায়ী নিরাপত্তা নিশ্চিত করে না। যদি কোনো গ্রিনকার্ডধারীকে জাতীয় নিরাপত্তার জন্য হুমকি হিসেবে বিবেচনা করা হয়, তাহলে তার স্থায়ী বসবাসের অধিকার বাতিল করা হতে পারে। এই সতর্কবার্তায় আরও উল্লেখ করা হয়, বৈধ অভিবাসীদের উচিত “অতিথির মতো আচরণ” করা, যাতে তারা যুক্তরাষ্ট্রের আইনের পরিপন্থী কিছু না করেন।
নজরদারির আওতায় ব্যক্তিগত মতাদর্শ ও অনলাইন কার্যক্রম
ট্রাম্প প্রশাসনের অধীনে শুধু ব্যক্তির আইনগত অবস্থা নয়, তার চিন্তাভাবনা, মতাদর্শ এবং অনলাইন কার্যক্রমও এখন নজরদারির আওতায় রয়েছে। USCIS এবং অন্যান্য নিরাপত্তা সংস্থাগুলো সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমের ব্যবহার, রাজনৈতিক অবস্থান বা কার্যকলাপ পর্যবেক্ষণ করছে। এর ফলে গ্রিনকার্ডধারীদের মধ্যেও একপ্রকার আতঙ্ক তৈরি হয়েছে— যে কোনো সময় কোনো ‘বিচ্যুতি’ তাদের স্বপ্নভঙ্গের কারণ হতে পারে।
বাস্তব অভিজ্ঞতা: ফেরত পাঠানোর ঘটনা
নানা সংবাদমাধ্যমের প্রতিবেদনে উঠে এসেছে, বৈধ কাগজপত্র থাকা সত্ত্বেও অনেক অভিবাসীকে নিজ দেশে ফেরত পাঠানো হয়েছে অথবা যুক্তরাষ্ট্রে তাদের প্রবেশে নিষেধাজ্ঞা জারি করা হয়েছে। এর পেছনে প্রশাসনের ব্যাখ্যা হচ্ছে, এসব ব্যক্তি কোনো না কোনোভাবে নিরাপত্তা বা সামাজিক শৃঙ্খলার জন্য হুমকি হয়ে উঠতে পারেন বলে মনে করা হয়েছে।
মানবাধিকার প্রশ্নে উদ্বেগ
এইসব পদক্ষেপ অভিবাসন-সংক্রান্ত মানবাধিকার ও নাগরিক স্বাধীনতা নিয়ে উদ্বেগ সৃষ্টি করেছে। বিশেষজ্ঞদের মতে, যুক্তরাষ্ট্রে দীর্ঘদিন বসবাসকারী ও সমাজে অবদান রাখা বহু বৈধ অভিবাসী এই নীতির কারণে অযথা হয়রানির শিকার হচ্ছেন।
মার্কিন সংবিধানে মতপ্রকাশের স্বাধীনতা, ধর্মীয় স্বাধীনতা এবং আইনের আশ্রয়ের অধিকার নিশ্চিত করা হলেও, অভিবাসন ব্যবস্থার এমন তৎপরতা সেই মৌলিক অধিকারের সাথে সাংঘর্ষিক বলেও অনেকে মত দিচ্ছেন।
ভবিষ্যৎ অনিশ্চয়তা
ট্রাম্প প্রশাসনের এই কঠোর ও বিস্তৃত অভিবাসন নীতির ফলে যুক্তরাষ্ট্রে থাকা গ্রিনকার্ডধারী অভিবাসীদের ভবিষ্যৎ আরও অনিশ্চিত হয়ে উঠেছে। বিশেষ করে যেসব অভিবাসী দেশটিতে একাধিক দশক ধরে বসবাস করছেন, কাজ করছেন ও কর প্রদান করছেন, তারাও এখন নতুনভাবে ভাবতে বাধ্য হচ্ছেন— তাঁরা কি আদৌ স্থায়ী নিরাপত্তা ও মর্যাদা পাচ্ছেন?